নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিচালিত এনজিওগুলো থেকে স্থানীয়দের গণছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সংগঠন। তাদের দাবি, চাকরিচ্যুতদের ফিরিয়ে আনা এবং ৭০ শতাংশ কোটাই স্থানীয়দের জন্য রাখা। অন্যথায় এনজিওগুলোকে প্রতিহত করার ঘোষণাও দিয়েছেন স্থানীয় সংগঠনের নেতারা। আর এতে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে এনজিওগুলো। আবার সচেতন মহল মনে করে, স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ভাষার মিল রয়েছে। তাই স্থানীয়দের দিয়ে কাজ করালে ক্যাম্পগুলোয় অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশটির রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ শুরু করে। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। এর পর উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে শুরু হয় তাদের বসবাস। সেই সঙ্গে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার সহায়তায় কাজ করছে দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি সংস্থা। এগুলোয় স্থানীয় কিছু লোকজন চাকরি পেলেও সম্প্রতি গণহারে ছাঁটাই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। তবে এনজিওগুলোর দাবি, ছাঁটাই নয়, প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে চাকরি যাচ্ছে কর্মীদের।
কক্সবাজারবাসী সংগঠনের মূল সমন্বয়ক ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করা স্থানীয়দের অধিকার। একটি মহল ক্যাম্পে দেশবিরোধী কর্মকা- করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে স্থানীয়দের চাকরি থেকে বাদ দিচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা আগামী ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেব। আর ২৭ জানুয়ারি অবস্থান ধর্মঘট করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এদিকে রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উখিয়া-টেকনাফের অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষায় ১০ দফা দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী ও মানবসেবামূলক সংগঠন ‘জাগো উখিয়া’। সংগঠনের প্রধান আইনজীবী শফিউল করিম মিঠু বলেন, ‘আমাদের ১০ দফার মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ ত্রাণ নয়, ঘরে ঘরে যোগ্যতা শিথিলপূর্বক শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তা করা; সব এনজিওতে নিয়োগকৃত রোহিঙ্গাদের ছাঁটাই ও নিয়োগ বন্ধ করা; প্রকল্প শেষ হওয়ার অজুহাতে অন্যদের বহাল রেখে স্থানীয়দের ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।’
দেশি এনজিও ব্র্যাক থেকে চাকরি হারানো উখিয়ার এক যুবক বলেন, ‘আমাকে কোনো নোটিশ না দিয়েই বলা হয়েছে, কাল থেকে তোমার চাকরি নেই।’ আইওএম থেকে চাকরি হারানো মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয় হওয়ার কারণে আমার চাকরি গেছে। আমার সঙ্গে যারা কক্সবাজারের বাইরের ছেলেমেয়ে ছিল তারা ঠিকই কাজ করছে।’ কারিতাস থেকে চাকরি হারানো স্থানীয় যুবক ইমরান বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা থেকে কেবল কক্সবাজারের বাসিন্দা হওয়ার অপরাধে গণছাঁটাই চলছে। স্থানীয় দুই শতাধিক ছেলেমেয়েকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’
আমরা কক্সবাজারবাসীর করিম উল্লাহ বলেন, ‘যেসব স্থানীয় ছেলেমেয়ের চাকরি চলে গেছে, তাদের ফেরতসহ প্রতিটি সংস্থায় ৭০ শতাংশই স্থানীয়দের দিতে হবে। অন্যথায় সেই এনজিও প্রতিহত করা হবে।’ আরেক আন্দোলনকারী নজরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমরা। তা হলে আমরা কি শুধু ক্ষতিগ্রস্তই রয়ে যাব?’
এনজিওদের সমন্বয়ক ‘ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ’-এর মুখপাত্র সৈকত বিশ্বাস বলেন, ‘বেশ কিছু স্থানীয় চাকরি করছেন। তবে প্রকল্প বন্ধ হওয়ার কারণে কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছেন। এটি উদ্দেশ্যমূলক নয়।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের কাছে এনজিওর নাম চাওয়া হয়েছে। কোন এনজিও থেকে কী কারণে, কার চাকরি গেছে; সেটির তালিকাও চাওয়া হয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি এনজিওগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সভা রয়েছে, সেখানে বিষয়টিকে নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হবে। তবে বিষয়টি দেখার জন্য উখিয়া ও টেকনাফের ইউএনওদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।’
ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘এখন আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করা প্রায় ১৩০টি এনজিও রয়েছে। এগুলোর কোন সংস্থায় কতজন দেশি, বিদেশি ও স্থানীয় রয়েছেন; তা যাচাই করা হচ্ছে। আমি মনে করি খুব দ্রুত এর একটি ভালো সমাধান হবে।’ সুত্র : আমাদের সময়
পাঠকের মতামত: